মিয়ানমার সীমান্তে সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল শনিবার সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলের নেতা ও লেবার পার্টির প্রধান স্যার কেয়ার স্টারমার। এ সময় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ওপর ক্রমবর্ধমান বোঝা সম্পর্কে লেবার পার্টির নেতাকে অবহিত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লেবার পার্টির নেতার সাক্ষাতে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি সশস্ত্র সংঘাতের সাম্প্রতিক বিস্তার নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতর ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করছে।

প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনে গেছেন। স্যার স্টারমার রানির স্মরণে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তাঁরা ব্রিটেনের লেবার পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্যার হ্যারল্ড উইলসনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথাও স্মরণ করেন।

লেবার পার্টির প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য চমৎকার সম্পর্কে আবদ্ধ এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের দ্বারা এই সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে। ’

স্যার স্টারমার যুক্তরাজ্যজুড়ে লেবার পার্টি থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, লেবার পার্টি তরুণ প্রজন্মের নেতাদের সহায়তা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা দানে কাজ করছে, যা আরো ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণদের আকৃষ্ট করবে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষকে খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষা করতে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণের ওপর ভিন্ন রকম প্রভাব ফেলছে কি না, তা পর্যালোচনার পরামর্শ দেন। উভয় পক্ষ চলমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের কারণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কে সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে মত বিনিময় করে।

লেবার পার্টির নেতা বলেন, তাঁরা যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমের বড় খুচরা বিক্রেতাদের জন্য তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে ব্যয় ভাগ করে নেওয়ার পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। পরে মেরিলেবোনের লর্ড স্বরাজ পাল তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের প্রবীণ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের জন্য তাঁর প্রশংসা পুনর্ব্যক্ত করেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) প্রেসিডেন্ট চেলসির লর্ড করণ বিলিমোরিয়া সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ আমন্ত্রণ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, লর্ড বিলিমোরিয়া যুক্তরাজ্যের কারিশিল্পের উন্নয়নে তাঁর কাজ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

প্রধানমন্ত্রী টিকা উন্নয়ন গবেষণায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন।

লর্ড বিলিমোরিয়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নীতি সমুন্নত রাখা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান পার্সি বংশোদ্ভূত, যিনি যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে স্থান পেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে লর্ড বিলিমোরিয়ার প্রয়াত পিতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল ফরিদুন বিলিমোরিয়ার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অনেকের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.