ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে আতঙ্ক : নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উভয় দেশের নাগরিকেরা খাদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করছেন এবং অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর ছেড়েছেন। শুক্রবার (৯ মে) উভয় পক্ষের মধ্যে টানা তৃতীয় দিনের মত ড্রোন ও গোলাবারুদ ব্যবহারে যুদ্ধ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে, যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী অমনপ্রীত ধিল্লন বলেন, ‘আমাদের গ্রাম পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে নারীদের ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমিও ভাবছি, কারণ আমাদের গ্রাম পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে।’

কাশ্মীরের উরি জেলার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গোলাবর্ষণের কারণে অনেকেই রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। বারামুল্লার বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী বশির আহমদ বলেন, ‘আমরা জীবনে কখনও এত তীব্র গোলাবর্ষণ দেখিনি। রাতেই লোকজন বাড়িঘর ফেলে পাথরের আড়ালে বা বাংকারে আশ্রয় নেন।’

শুক্রবার লাহোরে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শহরের বাসিন্দা ও দোকানিরা জানিয়েছেন, লোকজন মাংস, ময়দা, ডাল, তেল, চা এবং রান্নার গ্যাসসহ এক মাসের বাজার করে রাখছেন। নগর কর্তৃপক্ষ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্কতা জারি করেছে।

লাহোরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী আরুশা রমিজ বলেন, ‘আমি এক মাসের জন্য বাজার করে নিয়েছি, ব্যাংক থেকেও অতিরিক্ত নগদ টাকা তুলে এনেছি।’

পাকিস্তানে জনপ্রিয় খাবার সরবরাহ অ্যাপ ফুডপান্ডা জানিয়েছে, গোটা দেশজুড়ে তাদের মুদিপণ্য সরবরাহের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে।

ভারতের খাদ্যমন্ত্রী জনগণকে আতঙ্কিত হয়ে খাদ্যদ্রব্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চাল, গম ও ডালের মজুত স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আছে।’ তবে পাঞ্জাবের বাসিন্দা পঙ্কজ শেঠ বলেন, ‘আমাদের কাছে বিকল্প নেই। কাল বাজার খোলা থাকবে কি না, জানি না। তাই আগে থেকেই কিনে নিচ্ছি।’

কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে রাতে গোলাবর্ষণের আশঙ্কায় মানুষজন বাংকারে রাত কাটাচ্ছেন। পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানিয়েছে, দুটি এলাকায় অন্তত ৪০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নিলম উপত্যকার জুরা বান্ডি গ্রামের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী মনজুর আহমদ বলেন, ‘মুজাফফরাবাদে ভারতের হামলার পর থেকেই আমরা পাহাড় কেটে তৈরি করা বাংকারে বাস করছি। এখানেই এখন রাত কাটাতে হচ্ছে।’

নতুন করে শুরু হওয়া এই দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না এলে তা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

 

You might also like

Comments are closed.