পেঁয়াজ ও সবজির দাম চড়া

শীতকালের শেষের দিকে বাড়তি সরবরাহের কারণে সবজির বাজারে যে স্বস্তি পাওয়া গিয়েছিল, গ্রীষ্মের শুরুতে এসে তা উধাও হয়ে গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ এখনও পর্যাপ্ত নয়। ফলে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ব্যতিক্রম ছাড়া ৮০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। দাম বেড়েছে পেঁয়াজেরও। এর মধ্যে মাছেরও বাজারে চড়া ভাব দেখা গেছে। ফলে বাজারে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা। তবে ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও নানা ধরনের মুদি পণ্যের দাম আগের মতোই আছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমনটা।

রাজধানীর সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গ্রীষ্মের মৌসুম পড়ছে। যে কারণে এ মাঝামাঝি সময়ে সবজির সরবরাহ কম। এতে প্রায় প্রতিটি সবজির কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে গত তিন-চার মাস সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে যে স্বস্তি ছিল, তা আর নেই। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। কোনো কোনো সবজির দাম একশো পেরিয়ে গেছে।

কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন প্রতি কেজি পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে টাকা। ঢেড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০-থেকে ৭০ টাকায়। এরচেয়ে কমে শুধু পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে, তাও ৪০-৫০ টাকা কেজিতে।

এদিকে করলা, বেগুন, বরবটি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এরচেয়ে বেশি দর দেখা গেছে কাঁকরোলের দাম। গ্রীষ্মকালীন এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সজিনার দর সবসময় কিছুটা বেশি থাকে। এর কেজি দেখা গেছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহিন বলেন, গ্রীষ্মের সবজি কেবল উঠতে শুরু করেছে। প্রতিবছর সিজন চেঞ্জের এসময়ে দাম বেশি থেকে। কিছুদিন গেলে আবার দাম কমবে। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, আড়তে সবজি তুলনামূলক কম আসছে। পাইকারিতে বেশি দামে কিনতে হয়, তাই আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি।

অন্য দিকে, মাছের বাজারেও বেশ চড়াভাব দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চাষের মাছের সরবরাহ কিছুটা কম। নদীর কিছু মাছের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি জাটকা ধরা বন্ধ থাকায় অনেক নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ আছে। এ কারণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশসহ চিংড়ি মাছের দাম। প্রতি ৭০০ গ্রামের এক হালি ইলিশ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ৪০০-৫০০ গ্রামের মাছের দাম ১২০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়ে প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এর দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দাম বাড়তি। চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশও আগের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি চাষের রুই -কাতলা ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৪০ টাকা ও পাঙাশ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা আবদুল হালিম জানালেন, এই মৌসুমে পুকুর-বিল শুকনো থাকে।খাল-নদীতেও মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। এই সময়ে চাষের মাছের সরবরাহও কম থাকে। এ কারণে মাছের চাহিদা বেড়েছে; দামও বেড়েছে।

অন্যদিকে, ঈদের পর থেকে চড়া পেঁয়াজের বাজার। এসময়ে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে দাম। এখন বাড়তি দামে আটকে আছে। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরও ৫-১০ টাকা বেশি।

তবে মাংসের বাজারে এখন অনেকটাই স্বস্তি আছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাড়তে থাকে মাংসের দাম। তখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগির কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা। এখন ব্রয়লার ১৭০-১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা দাম কমেছে গরুর মাংসেরও। ঈদের আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। এখন তা কমে ৭৫০ টাকায় মিলছে।

বেশ কয়েক সপ্তাহ নিম্নমুখী থাকা ডিমের দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। মাসখানেক ধরেই এ দামের আশপাশে রয়েছে ডিম।