নীলফামারীর সোহানের মুখে গুগলে চাকরি পাওয়ার উপায়

নীলফামারীর ডোমারের ছেলে আল নাসিরুল্লাহ সিদ্দিকী সোহান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন ২০১৮ সালে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পাড়ি জমান জার্মানিতে। সেখানে ১ম সেমিস্টারে পড়াকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলে চাকরির আবেদন করেন সোহান। এরপর পরীক্ষার সব ধাপ পেরিয়ে গত বছর ৬ ডিসেম্বর গুগলের পোল্যান্ড অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার) হিসেবে যোগ দেন তিনি।

আল নাসিরুল্লাহ সিদ্দিকী সোহান ডোমার পৌর শহরের পল্টনপাড়া এলাকার হামিদার ও আয়েশা দম্পতির ছেলে। বাবা ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা। মা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সোহান ছোট।

সোহান ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি এবং রংপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সব সময় নানা বিষয়ে সহযোগিতা পেয়েছেন বড় ভাই শাহেদ শাহরিয়ারের। শাহেদ বর্তমানে গুগলের ডাবলিন শাখায় কর্মরত।

সোহান বলেন, আমার এই জার্নিতে ফাইন্যান্সিয়াল কোনো প্রতিবন্ধকতা তেমন ছিল না। সাধ্যের মধ্যে আব্বু সব সময়ই সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এইচএসসি পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ঢাকায় প্রথম যখন গেলাম তখন একটু ধাক্কা খেয়েছি। ঢাকায় প্রথম মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়েছে। প্রথম দেড় বছরের বেশিরভাগ সময় আমি অসুস্থ থাকতাম। তারপর ধীরে ধীরে ভালোর পথে গেছে। এরপর মাস্টার্স করার জন্য পাড়ি জমাই জার্মানিতে। সেখানে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডর্টমুন্ডে ডেটা সায়েন্সের ছাত্র ছিলাম। ১ম সেমিস্টারে বিভিন্ন কোম্পানিতে আবেদন করা শুরু করি। তারপর গুগলে আবেদন করি। শেষমেষ গুগল থেকে অফার পাই। আমি মূলত অফার পাই গুগল পোল্যান্ডে।

গুগলে চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি বেশ দীর্ঘ এবং জটিল। গুগলের ক্যারিয়ার সাইট রয়েছে। সেখানে প্রত্যেকটা পজিশনের জন্য পোস্ট করা থাকে। সেই পোস্ট থেকে ডিরেক্ট আবেদন করা যায়। আরেকটা হচ্ছে পরিচিত কেউ থাকলে তার রেফারেন্স। যেহেতু অনেকেরই স্বপ্ন থাকে গুগলে চাকরি করা, তাই এখানে প্রতিযোগিতা ঢের বেশি। অন্যান্য চাকরির মতো গুগলে চাকরির প্রথম শর্ত, জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়া। সিভি দেওয়ার পরে তারা যদি যোগ্য মনে করে তাহলে গুগলের একজন রিক্রুটারের সঙ্গে ফোনে সাক্ষাৎকার হবে। এরপর সাক্ষাৎকার আশানুরূপ হলে ৪৫ মিনিটের একটা কোডিং রাউন্ডে অংশ নিতে হয়। এই কোডিং রাউন্ডের ফলাফল ইতিবাচক হলে শেষে ফাইনাল রাউন্ডে অংগ্রহণের সুযোগ মেলে। এটাকে অনসাইড রাউন্ডও বলে।

একটা সময় এসব সাক্ষাৎকার অফিসে গিয়ে দিতে হতো। করোনার পর এখন অনলাইনে হচ্ছে। ফাইনাল রাউন্ডে আমার চারটা কোডিং সাক্ষাৎকার হয়েছে। আর একটা থাকে বিহ্যাভিয়্যারাল রাউন্ড। অনেকের ক্ষেত্রে আমি শুনেছি তিনটা কোডিং রাউন্ডও হয়। এরপর সব পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় করে পাঠানো হয় গুগলের চাকরিদাতা (হায়ারিং) কমিটিতে। তারাই চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করেন।

গুগলে কাজ সর্ম্পকে সোহান বলেন, আমি মূলত গুগলের ক্লাউডে কাজ করছি। গুগলের তো অনেক প্রোডাক্ট। বড় অংশের মানুষই মনে করে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে কাজ করি। আমি একজন সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার। মেইন কাজ হচ্ছে যে প্রোডাক্টের জন্য সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার সে প্রোডাক্ট যেন রানিং থাকে ঠিকঠাক মতো সেটি দেখা।

নতুন যারা টেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে সোহান বলেন, গুগলসহ বিভিন্ন টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে কাজ করতে চাইলে প্রব্লেম সলভিং, কোডিং স্কিল ও কমিউনিকেশনে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এজন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে। বিশেষ করে সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে। কোডিং সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানতে হবে। প্রচুর হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। কোনো শর্টকাটের চিন্তা করা যাবে না। আরেকটা জিনিস হচ্ছে মুখস্থ বিদ্যার উপর ফোকাস করা যাবে না। সবকিছু চিন্তা করে এনালাইটিক্যাল মাধ্যমে আসতে হবে। সমস্যা সমাধানের চিন্তা থাকতে হবে। মানে স্যার একটা জিনিস পড়াইছে বলে আমি পারি এমনটা হওয়া যাবে না। স্যার পড়ানোর আগেই আমি নিজে একটু দেখলাম। আমি জিনিসটি নিয়ে চিন্তা করলাম- কিভাবে এই সমস্যাটা সমাধান করা যায়। এই মেন্টালিটি থাকতে হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.