নারী যখন প্রেরণাঃ বাস চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন তরুণী!

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। পৃথিবীর সব নারীর অধিকার রক্ষায় ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় এবং তা যথাযথভাবে পালনের জন্য পৃথিবীর সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হয়। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৮ মার্চ একটি স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে পালিত হয়ে আসছে। কোনো কোনো দেশে দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবেও পালিত হয়। নারী দিবসে জেনে নিন কোটি কোটি নারীকে অনুপ্রেরণাদানকারী এক সাধারণ নারীর অসাধারণ গল্পঃ

সদ্যই কুড়ির গণ্ডি পেরিয়েছে ভারতের পশ্চিম্বঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার বরানগরের কল্পনা। কিন্তু এই বয়সেই পরিবারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে। বাধ্য হয়ে বই-খাতা ছেড়ে হাতে ধরেছেন বাসের স্টিয়ারিং। গোটা দিন বাসই যে তার ধ্যান-জ্ঞান!

বাবা, মা, বোন ও দুই ভাইকে নিয়ে সংসার বরানগরের কল্পনা মণ্ডলের। পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সংসারের দায়িত্ব হাসিমুখে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।

সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করেই বেড়িয়ে পড়েন বাস নিয়ে।

সারাদিনে একাধিকবার এসপ্ল্যানেড-বরানগর সফর সেরে রাতে ফেরেন বাড়িতে। প্রথমদিকে অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠেছিল আদৌ কল্পনা পারবেন তো? স্বাভাবিকভাবেই পরিবার ছাড়া কাউকেই পাশেও পাননি তিনি।

কিন্তু শেষ আট মাসে প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তিনি। তাই এখন পরিজন থেকে প্রতিবেশী সকলেই কল্পনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু তারাই নন, সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে কোটি কোটি তরুণীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন কল্পনা।

এ প্রসঙ্গে কল্পনার বাবা সুভাষ মণ্ডল জানিয়েছেন, এককালে চকোলেট কারখানায় কাজ করলেও আর্থিক অনটনের কারণে বন্ধুর সহযোগিতায় বাস চালাতে শুরু করেন তিনি। তখন থেকে বাবার সঙ্গে থেকে মাঝেমধ্যে গোটা বিষয়টি মন দিয়ে দেখতো কল্পনা। তবে তা যে কোনওদিন এভাবে কাজে লাগবে তা ভাবতেও পারেননি কেউ। এরপর বছর দুয়েক আগে দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পান সুভাষবাবু। সেই থেকে বন্ধ তার বাস চালানো। প্রবল অনটনে স্টিয়ারিং হাতে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কল্পনা।

প্রথম থেকে বাবা পাশে থাকলেও বাস পেতে প্রবল সমস্যা ভোগ করতে হয়েছিল তরুণীকে। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অনেক বাস মালিকই। অবশেষে মেলে বাস। যাত্রী নিয়ে এসপ্ল্যানেড-বরানগর রুটে যাত্রা শুরু করেন কল্পনা। আর এখনতো একডাকে সবাই চেনে তাকে। পরিবারের জন্য ছোটো মেয়ে যা করছে, তাতে আপ্লুত সুভাষবাবু। মেয়ে কল্পনাই তার গর্ব, দৃপ্ত কন্ঠে জানান তিনি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.