নগদ সহায়তা পাবেন প্রবাসফেরত ২ লাখ শ্রমিক

বৈশ্বিক অতিমারি করোনার সংক্রমণ শুরু হয় ২০১৯ সালের শেষের দিকে। দেশে দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গেল দেড় বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ আর্থিক কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। ফেরত আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনে সরকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে দুই লাখ শ্রমিক ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা পাবেন। এ ছাড়া পুনরায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ, দেশে কাজের সংস্থান, ব্যবসার পুঁজি জোগান- এমন নানা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্প’ নামে এটি বাস্তবায়ন করবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ফেরত আসা প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বেশি মজুরি পাওয়ার উপযোগী কর্মী তৈরি করা, ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া, কারিগরি এবং অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া। এসব সেবা নিশ্চিত করতে একটি তথ্যভান্ডার করা হবে। প্রবাসীদের সব ধরনের তথ্য থাকবে সেখানে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে করোনা শুরু হলেও বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী ফেরত আসা শুরু হয় মূলত গত বছরের এপ্রিল থেকে। ওই বছর মোট চার লাখ ৭৯ হাজার শ্রমিক ফেরত আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। সবচেয়ে বেশি আসে সৌদি আরব, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আরও ৪১ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। এসব প্রবাসীর মধ্যে ২০২০ সালে ফেরত আসা দুই লাখ প্রবাসী শ্রমিক প্রকল্পের আওতায় সুযোগ-সুবিধা পাবেন। দেশের ৩২টি নির্দিষ্ট জেলার প্রবাসী শ্রমিকরাই এতে বিবেচিত হচ্ছেন।
প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জানতে চাইলে কমিশনের সংশ্নিষ্ট শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব শরিফা খান বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে ফেরত আসা অসহায় প্রবাসী শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার প্রচেষ্টা আছে। প্রকল্পে কেবল ২০২০ সালে ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকদেরই সেবা দেওয়া হবে। পরে এ ধরনের আরও উদ্যোগের মাধ্যমে বাকিদেরও সুবিধার আওতায় আনার কথা আছে। আপাতত দেশের ৩২টি জেলার ফেরত প্রবাসীরা প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। জেলা নির্বাচনের ভিত্তি জানতে চাইলে সচিব বলেন, প্রবাসী শ্রমিক অধ্যুষিত জেলাগুলোকেই প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রকল্পটির উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। ২০২৩ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৪২৫ কোটি টাকাই দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ফেরত শ্রমিককে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে নগদ অর্থ হিসেবে প্রত্যেককে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। ফেরত শ্রমিকদের মধ্যে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মী বাছাই করে সরকারের বিভিন্ন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সনদের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশে-বিদেশে চাকরিতে তারা বিশেষ সুবিধা পায়। এ ছাড়া আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও ঋণ সুবিধা পাওয়াসহ সব ধরনের সেবা সহজ করা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসার উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আর্থিক ও পরামর্শ সুবিধা দেওয়া হবে।

প্রকল্পের আওতায় থাকা জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.