আবদ্ধ জলাভূমি থেকে শুরু করে লেক কিংবা জলাধারের পাশে গাছপালায় পাখির বাসা এক পরিচিত দৃশ্য। তবে রাজধানীর পরিচিত ধানমন্ডি লেকের পারে দেখা মিলছে এক ব্যতিক্রম দৃশ্য। পাখির বাসা চোখে না পড়লেও দেখা মিলবে বইয়ের বাসা। গাছে গাছে ঝুলছে বই রাখার বাক্স, ঠিক যেন পাখির বাসার মতোই।
সবুজের ছায়া ঘেরা ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ আসেন বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে। আড্ডা ছাড়াও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি আর ব্যায়ামের জন্য এই লেকের দুই পাশেই লোকজনের আনাগোনা থাকে প্রায় সব সময়। রাজধানীবাসীর এই অবসর যাপনের স্থানটিকে মাত্রা দিয়েছে জাকিয়া রায়হানা রুপার এক অভিনব উদ্যোগ।
জাকিয়া রায়হানা রূপা একজন বইপ্রেমী। ফেসবুকে একটি ভিডিও খুলে দেয় তার চিন্তার দুয়ার। ভিডিওটিতে দেখা যায়, জার্মানির রাস্তা থেকে শুরু করে জঙ্গলেও রয়েছে বুক সেলফ রয়েছে। রূপা ভাবলেন, জার্মানিতে সম্ভব হলে বাংলাদেশে কেন নয়, সে চিন্তা থেকেই বাড়ির পাশে ধানমন্ডি লেক থেকেই শুরু করে স্বপ্নযাত্রা।
মাত্র একটি বুক কেসে মহিউদ্দিন মোহাম্মদের পাঁচটি বই দিয়ে শুরু করেন রূপা। এখন লেকের বিভিন্ন জায়গায় সাজানো আছে মোট ১৫টি বুককেস। প্রতিটি কেসে রয়েছে নানা ধরনের বই। প্রতি কেসে ৬-৭টি বই থাকে। এই বুককেসগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বৃষ্টি হলেও সমস্যা হবে না।
রূপা জানান, শুরু থেকেই চারদিক থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। এখন গাছে গাছে ঝুলছে ছোট ছোট বুক কেস। নজরে পড়ছে লেকে ঘুরতে আসা মানুষদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আগ্রহ। অনেকেই নিয়মিত বই পড়ছেন এখানে এসে। না পড়লেও, অন্তত হাতে নিয়ে দেখছেন বইগুলো।
ধানমন্ডি লেক পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষজন রূপার এমন অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। প্রথমদিকে নিজের অর্থ থেকে বুকে কেস আর বইয়ের জোগান দিলেও এখন অনেকের কাছ থেকেই সাড়া পাচ্ছেন রূপা। বই দান করছেন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের বইপ্রেমীরা।
গাছে গাছে বইয়ের বাসা ঝুলিয়ে নতুন এই উদ্যোগের কারিগর জাকিয়া রায়হানা রূপা জানান, গল্প-উপন্যাসের চাইতে তিনি এমন সব বিষয়ের বই রাখতে চান, যা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি চান, একটা সময়ে যেন পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ে গাছে গাছে বইয়ের এমন বাসা।