দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে

চলমান কোভিড-১৯ মহামারির ফলে দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে, অস্থায়ী কিংবা খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সঙ্গে নিয়োজিত নাগরিকরা এই ঝুঁকিতে পড়েছেন। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিলে কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার এসডিজির নতুন চ্যালেঞ্জ ও বাজেট ২০২০-২১ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

এসডিজি প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থান করেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। এবারের বাজেটে অদক্ষতা কমানো, দুর্নীতি দমন এসব বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে পর্যায়ক্রমিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চলমান সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এসডিজি প্ল্যাটফরমের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর যে বাজেট দেওয়া হয় সেটি বাস্তবায়ন হয় না। করোনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিলেও এটি কীভাবে ব্যয় হবে সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করেননি। আমরা দেখতে পাই, উচ্চবিত্তরা প্রতিবছর ব্যাংকক, সিঙ্গপুরে চিকিত্সা নিতে দেশের বাইরে যে অর্থব্যয় করছে তা জিডিপির প্রায় দশমিক ৫ শতাংশের সমান। করোনায় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী উভয় ধরনের এলিটরা আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু তারা দেশের বাইরে যেতে পারছে না। তাছাড়া দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এখন তাদের কোনো উপায় নেই। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভিআইপিরা চিকিত্সা নিচ্ছেন। জিডিপির কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করেন তিনি।

সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দারিদ্র্য বাড়বে এটা ঠিক। সাধারণ মানুষের আয় কমে যাচ্ছে এটা নিয়েও বিতর্ক নেই। চলমান অতিমারি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সরকার একটি স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নেবে। ইতিমধ্যে সরকার প্রণোদনাসহ ১৯টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রমেই সরকার দেশের ঝুঁকিতে থাকা সকল নাগরিকের সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারটি বিবেচনায় থাকবে।

চলমান অতিমারিতে নারী, শিশু, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, আদিবাসী, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত জনগোষ্ঠী, যুবসমাজসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে এ সংলাপে আলোচনা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ মাইক্রোস্কোপ দিয়েও পাওয়া যাবে না।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে যে অর্থায়নের প্রয়োজন হবে সেটি সংগ্রহ করা এখন আরো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নারীদের প্রতি পারিবারিক সহিংসতা বাড়লেও বাজেটে নারীদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তেমন উদ্যোগ দেখিনি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.