দাঁতের ফাঁকে মাংস আটকালে যা করবেন

কোরবানি ঈদ মানেই যেন ত্যাগের মহিমা, আর তার সঙ্গে মজাদার মাংসের বাহারি রকমের পদ। বছরের এই একটি দিনে প্রায় প্রতিটি ঘরেই মাংসের নানান পদের সুবাস ম ম করে। এই ঈদে মাংস খাওয়া যেমন আনন্দ ও ভালো লাগার ব্যাপার, তেমনি দাঁতের ফাঁকে মাংস আটকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যাও বটে। কুরবানির পর মাংস খাওয়ার সময় প্রায়শই এমন অস্বস্তিতে পড়তে হয় অনেককেই।

দাঁতের ফাঁকে মাংসের আঁশ আটকে যাওয়া শুধু বিরক্তির কারণই নয়, বলা চলে এটি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। মাড়িতে প্রদাহ কিংবা সংক্রমণ, এমনকি ক্যাভিটির ঝুঁকিও বাড়ে। তাই কুরবানির ঈদে দাঁতের ফাঁকে মাংস আটকালে দ্রুত এবং সঠিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।

যে কারণে দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে যায়

 

দাঁতের গঠনগত ত্রুটি, আঁকাবাঁকা দাঁত, দাঁতের মাঝে অতিরিক্ত ফাঁকা স্থান কিংবা পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ ফিলিংয়ের কারণে খাবারের কণা সহজেই আটকে যেতে পারে। মাংসের আঁশ বা তন্তুযুক্ত খাবার এই সমস্যাটি বেশি তৈরি করে, কারণ এগুলো সহজে ভেঙে যায় না।

দাঁতের ফাঁকে মাংস আটকালে যা করণীয়

দাঁতের ফাঁকে মাংস বা অন্য কোনো খাবার আটকে গেলে তা বের করার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন:

কুলি করুন: প্রথমেই উষ্ণ পানি দিয়ে ভালোভাবে কুলি করার চেষ্টা করুন। হালকা লবণ মেশানো পানি দিয়ে কুলি করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে, কারণ লবণ পানি মাড়ির প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। বেশ কয়েকবার জোরে কুলি করলে অনেক সময় আটকে থাকা খাবার বেরিয়ে আসে।

ফ্লস ব্যবহার করুন: ডেন্টাল ফ্লস হলো দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বের করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। একটি ছোট অংশ ফ্লস দাঁতের ফাঁকে আলতো করে ঢুকিয়ে ওপর-নিচে এবং পাশাপাশি নড়াচড়া করুন। তবে সতর্ক থাকুন, অতিরিক্ত জোরে ফ্লস করলে মাড়িতে আঘাত লাগতে পারে।

টুথপিক বা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ: যদি হাতের কাছে ফ্লস না থাকে, তবে একটি পরিষ্কার টুথপিক বা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। টুথপিক সাবধানে ব্যবহার করবেন যেন মাড়িতে ক্ষত না হয়। ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ দাঁতের ফাঁকা স্থান পরিষ্কার করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি, যা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

মাউথওয়াশ ব্যবহার: অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করলে খাবার বের হওয়ার পাশাপাশি মুখগহ্বরের জীবাণুও দমন হবে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

খাবার খাওয়ার পর ব্রাশ করুন: সবচেয়ে ভালো উপায় হলো খাবার খাওয়ার পর পরই দাঁত ব্রাশ করা। এতে খাবার আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যায় এবং মুখের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

যা করা উচিত নয়:

ধারালো কিছু ব্যবহার: সেফটি পিন, সুই বা অন্য কোনো ধারালো বস্তু দাঁতের ফাঁকে ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। এতে দাঁত বা মাড়ির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি সংক্রমণও ছড়াতে পারে।

অতিরিক্ত চাপ: আটকে থাকা খাবার বের করতে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না। এতে দাঁত বা মাড়ির গঠন নষ্ট হতে পারে।

কখন দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন

যদি উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরও খাবার বের না হয়, অথবা যদি দাঁতে ব্যথা, মাড়িতে ফোলা বা রক্তপাত দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন। দাঁতের ডাক্তার নিরাপদে আটকে থাকা খাবার বের করতে পারবেন এবং এর পেছনের কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারবেন।

দাঁতের নিয়মিত পরিচর্যা, যেমন দিনে দুবার ব্রাশ করা, প্রতিদিন ফ্লস করা এবং বছরে না হলেও অন্তত একবার দাঁতের ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো, এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

You might also like

Comments are closed.