দরিদ্র দেশগুলোর অগুণিত মানুষকে মূল্য দিতে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের

দারিদ্র্য বিরোধী দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এর রিপোর্ট

দারিদ্র্য বিরোধী দাতব্য সংস্থা অক্সফাম তাদের এক গবেষণায় সোমবার বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিশৃংখল অবস্থায় এরই মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষ মূল্য দিচ্ছেন। গত এক দশকে চরম ভাবাপন্ন আবহওয়া ও ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ দাবানলের কারণে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব হুমকি সামনে এগিয়ে আসছে তাতে যদি নেতারা দ্রুত ব্যবস্থা না নেন তাহলে এই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। লন্ডন থেকে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এতে বলা হয়, অক্সফামের গবেষকরা বলেছেন, বেশির ভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও দাবানলের কারণে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামনে বিপদ দেখতে পেয়ে কিছু মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এটা একটি ভাল উদ্যোগ হতে পারে।

অক্সফামের জলবায়ু বিষয়ক পলিসির নেতা টিম গোরে বলেন, এর মাত্রা বিস্ময়কর। কিউবা, ডমিনিকা, টুভালুর মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলো গড়ে প্রতি বছর তাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৫ ভাগকে দেখতে পেয়েছে বাস্তুচ্যুত। অর্থাৎ তাদেরকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে। টিম গোরে বলেন, বিশ্ব উঞ্চ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা সতর্কতা দিয়ে আসছি। আর এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি এর ফল আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে।

মাদ্রিদে দু’সপ্তাহের জন্য জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক নেগোশিয়েশন শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই অক্সফাম তার গবেষণায় যাচাই করে দেখেছে, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগে কি পরিমাণ মানুষ তাদের দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই হিসাব করা হয়েছে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন এজেন্সির ডাটা ও মিডিয়ার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় তার চেয়ে তিন গুণেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও দাবানলে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ার মতো কিছু দেশ তো ক্ষতবিক্ষত হয় খরা ও বন্যায় দুটিতেই। কখনো কখনো একই বছরে এই দুটি দুর্যোগ সেখানে হানা দেয়।

টিম গোরে বলেন, এসব বিপর্যয় বহু দরিদ্র দেশকে এমন এক অবস্থানে ফেলে যায় যে, তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আরেকটি বিপর্যয় তাদেরকে আঘাত করে। এর ফলে তাদের অনেকে বন্যা ও খরার কারণে সাহায্যের আবেদন জানাতে থাকেন। এটা এক ব্যতিক্রমী ব্যাপার। এটাই হলো জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশৃংখলা, যা প্রকৃতপক্ষে দেখা যাচ্ছে।

অক্সফামের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এমন শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে সাতটিই হলো উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্র। এর বেশির ভাগই প্যাসিফিক ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। তবে আবহাওয়া বিষয়ক বিপর্যয়ে গত এক দশকে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন তার মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই এশিয়ার। এর মধ্যে ফিলিপাইন থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত মানুষ বসবাস করছেন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার হুমকির মধ্যে। মে মাসে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতে ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন শুধু ঘূর্ণিঝড় ফনী’র কারণে। এর মধ্যে বেশির ভাগকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই উদ্ধার করে সরিয়ে নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য, যাতে হতাহতের সংখ্যা কম হয়। গবেষকরা বলছেন, সার্বিকভাবে গত এক দশকে আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট দুর্যোগের সংখ্যা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে খরার মতো ধীরগতিতে যেসব দুর্যোগ এসেছে তাতে কি পরিমাণ মানুষ বাস্তু থেকে উৎখাত হয়েছেন তাদের সমন্বিত সংখ্যা গবেষণায় উঠে আসে নি। কারণ, খরা কখন শুরু হচ্ছে এবং কখন শেষ হচ্ছে তা নির্ধারণ করাটা কছিন। টিম গোরের মতে, এই সংখ্যা যোগ করা হলে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। এ ছাড়া দুর্যোগের ফলে কি পরিমাণ মানুষ স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হন তার সংখ্যাও নির্ধারণ করা হয় নি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.