ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে একের পর এক ম্যাচে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু করতে হয়েছে কয়েকটি ম্যাচ, আবার কিছু ম্যাচে তীব্র গরমের কারণে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। এখন ফুটবল ভক্তদের মনে প্রশ্ন ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজনে আসলে কতটা প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার রাতে অরল্যান্ডোতে প্রচণ্ড বজ্রসহ বৃষ্টির কারণে ‘সি’ গ্রুপের বেনফিকা ও অকল্যান্ড সিটির মধ্যকার ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হয় প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে।
একই ভেন্যুতে মামেলোডি সান্ডাউন্স বনাম উলসান এইচডি ম্যাচের শুরু দেরি হয় এক ঘণ্টার বেশি।
তবে শুধু অরল্যান্ডো নয়, নিউ জার্সিতে পালমেইরাস বনাম আল আহলি ম্যাচে ৪০ মিনিট, আর সিনসিনাটিতে সালজবুর্গ বনাম পাচুকা ম্যাচে ৯০ মিনিটের বিরতি পড়ে ঝড়ের কারণে।
এরই মধ্যে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ফসিল ফ্রি ফুটবল’ সতর্ক করেছে—আগামী সপ্তাহে চরম তাপপ্রবাহে খেলতে হতে পারে অন্তত ১০ টি ম্যাচ। যেখানে তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বিশ্বকাপ ২০২৬ আয়োজিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। তার আগেই ক্লাব বিশ্বকাপে এমন আবহাওয়া-সংকট বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিফার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা আবহাওয়ার পরিস্থিতি নজরে রাখছি এবং সংশ্লিষ্ট ভেন্যু টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।’
গরমে ক্লান্ত মাঠ ও গ্যালারি
চার্লটের একটি ‘নো-শ্যাডো’ (ছায়াবিহীন) স্টেডিয়ামে পরবর্তী দুই ম্যাচে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম পাচুকা এবং বেনফিকা বনাম বায়ার্ন মিউনিখ। ফসিল ফ্রি ফুটবল আরও বলছে, ম্যাচ দুটিতে যথাক্রমে ৩৮ এবং ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দলগুলোকে খেলতে হতে পারে। এ অবস্থাকে তারা খেলোয়াড় ও দর্শকদের জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছে।
এছাড়া ন্যাশভিলে অকল্যান্ড সিটি ও বোকা জুনিয়র্স ম্যাচও নির্ধারিত ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যেখানে স্টেডিয়ামে ছায়া নেই বললেই চলে। এর বাইরেও ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক, সিনসিনাটি ও ওয়াশিংটন ডিসি-তেও খেলা হবে তীব্র গরমের মধ্যে।
৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পাসাডেনায় আতলেতিকোর বিপক্ষে পিএসজির ৪-০ গোলের জয়ের পর আতলেতিকো তারকা মারকোস লরেন্তে বলেন, ‘ভয়ানক গরম ছিল। আমার পায়ের আঙুলে ব্যথা হচ্ছিল, নখও জ্বলে উঠছিল… অবিশ্বাস্য।’
এমনকি গরমের কারণে অনেক দর্শক গ্যালারি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন । অভিযোগ উঠেছে, স্টেডিয়ামে পানির ব্যবস্থা ও ছায়া ছিল অপ্রতুল। বড় অভিযোগ প্রচণ্ড রোদে লম্বা লাইনেও ছিল না শৃঙ্খলা।
ফিফা অবশ্য ভিন্ন দাবি করছে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ভাষ্যমতে, ম্যাচের ৩০ ও ৭৫ মিনিটে দেওয়া হচ্ছে ‘কুলিং ব্রেক’, এছাড়া সমর্থকরা এক লিটার পরিমাণ পানি ও খালি বোতল নিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন।
আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ পিছিয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সম্প্রচার সূচিতেও। বেনফিকা বনাম অকল্যান্ড ম্যাচটি শেষ হওয়ার কথা ছিল চেলসি বনাম ফ্ল্যামেঙ্গো ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগে। কিন্তু প্রথম ম্যাচ শেষ হয় চেলসির ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক পরে।
বেনফিকার কোচ ব্রুনো লাজে বলেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের দীর্ঘতম ম্যাচ। পাঁচ ঘণ্টা ধরে আমাদের সঙ্গে থাকা সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য খেলেছি। কিন্তু গরম পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।’
এদিকে চেলসি কোচ এনজো মারেস্কা বলেন, ‘তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন। তাই আমরা খেলোয়াড়দের রোটেট করার পরিকল্পনা করছি।’
চেলসি প্রথম ম্যাচে লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি-কে হারালেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে।
এমন অবস্থায় বিশ্বকাপ ২০২৬-এর আগে পরিবেশ ও আবহাওয়া নিয়ে ফিফাকে আরও বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে—এমনটাই বলছেন ভক্ত সমর্থকরা।
Comments are closed.