ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত পুরুষরা, মৃত্যুতে এগিয়ে নারীরা
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৩৪ জন।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ ঘণ্টার (গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা) এ তথ্য জানানো হয়। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকায় দুজন এবং ঢাকার বাইরে তিনজন রয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০২ জনে। আর চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ জনে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন সাত হাজার ২৯২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯ হাজার ৫২৭ জন।
আক্রান্তে বেশি পুরুষরা, মৃত্যুতে নারী
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পুরুষরা। মৃত্যু বেশি হচ্ছে নারীদের। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ১০ হাজার ১৩১ জন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। আর নারী আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার ৪৩৮ জন।
মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। প্রতি ১২১ ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০৭ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩.৩৫ শতাংশ ও মৃত্যুর ৬৭.৬৪৪ শতাংশ ঢাকায়। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত ৫৬.৬৫ শতাংশ ও মৃত্যু ৩২.৩৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। এত মৃত্যু ও আক্রান্ত এর আগে কোনো বছর দেখেনি বাংলাদেশ।
২১ থেকে ৩০ বছরে মৃত্যু বেশি
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরে মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি, যা মোট মৃত্যুর ২২ শতাংশ। শূন্য থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সে মৃত্যু ছয়জন, ৬ থেকে ১০ বছরে কম বয়সে ১০ জন, ১১ থেকে ১৫ বছরে দুজন, ১৬ থেকে ২০ বছরের কম বয়সে আটজন, ২১ থেকে ২৫ বছরে ১১ জন ও ২৬ থেকে ৩০ বছরের কম ১১ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ফোরকাস্টিং মডেল (পূর্বাভাস) বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। এটি অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলোর এখন থেকেই এডিস মশা নিধনে সক্রিয় হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও ভাবতে হবে।’
কবিরুল বাশার আরো বলেন, বৃষ্টির ধরন বদলে যাওয়া, গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর একই সেরোটাইপ (ধরন), তাপমাত্রা বেশি থাকায় এডিস মশা প্রজননের উপযোগী না হওয়ার কারণে এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় কম। তবে সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি। তাই কম বলে আত্মতৃপ্তির কারণ নেই।