১০৯ বছর আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ইতিহাস

বিখ্যাত জাহাজ ‘টাইটানিক’ ডোবার ১০৯ বছর পূর্ণ হলো৷ ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিলের প্রথম প্রহরে ডুবেছিলো টাইটানিক৷ এরআগে ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতের ঠিক আগে আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লাগে জাহাজটির। এর তিন ঘণ্টা পর জাহাজটি ডুবে যায়৷

এই শত বছরে জাহাজডুবির আরও অনেক ঘটনাই ঘটেছে৷ কিন্তু টাইটানিকের মতো কোনোটাই এতটা আলোড়ন তুলতে পারেনি৷ এই এক জাহাজকে নিয়ে কত যে গান, কবিতা আর বই লেখা হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই৷ হলিউডে হয়েছে ব্লকবাস্টার ছবিও৷ যে বছর টাইটানিক ডোবে সে বছরই কয়েকটি বই প্রকাশ পায়৷ এরপর পঞ্চাশের দশকে টাইটানিককে নিয়ে বানানো হয় ‘এ নাইট টু রিমেম্বার’ নামের একটি ছবি৷ সেসময় একটি বই’ও বের হয়েছিল৷ এরপর ১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের খোঁজ পাওয়ার পর আবার টাইটানিক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আর ১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের ‘টাইটানিক’ মুক্তির পর বিশ্বের সবার কাছেই পৌঁছে যায় এই জাহাজের গল্প৷

‘টাইটান’ ছিল গ্রিক পুরানের শক্তিশালী দেবতা। তার নামানুসারে এই জাহাজের নাম রাখা হয়েছিল ‘টাইটানিক’। এটি আসলে জাহাজটির সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো নাম ছিল ‘আর এম এস টাইটানিক’। ‘আর এম এস’ এর অর্থ হচ্ছে ‘রয়্যাল মেল স্টিমার’।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ব্রিটেনের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। মোট যাত্রী ছিলেন ২২০০ জন এবং কয়েকশ কর্মী ছিলেন জাহাজে। দুর্ঘটনায় মারা যান ১,৫১৩ জন৷ যাত্রী তালিকায় ছিল পৃথিবীর অনেক বড় বড় ধনীর নাম৷ ছিলেন পেইন্টার, লেখক, ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে শুরু করে অভিনেতারাও৷

যে সময় টাইটানিক ডোবে তখন সেটাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ৷ উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট শহরের একটি কারখানায় টাইটানিকটি তৈরি হয়েছিল৷ নির্মাণকাজ শুরু করা হয় ১৯০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কাজ করে ১৯১২ সালে জাহাজটির কাজ শেষ হয়। হল্যান্ডের ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ এই জাহাজটি নির্মাণ করেন। ৬০ হাজার টন ওজন। (উইকিপিডিয়া)

২৬৯ মিটার লম্বা, ২৮ মিটার চওড়া আর ৫৩ মিটার উঁচু টাইটানিক তৈরিতে খরচ হয়েছিল ১০ মিলিয়ন ডলার৷ বর্তমানের হিসেবে সেটা প্রায় ২১৩ মিলিয়ন ডলারের সমান৷ প্রস্তুতকারক কোম্পানি জাহাজে কোনো অ্যালার্ম সিস্টেম রাখেননি, কারণ টাইটানিক কখনো ডুববে না এমনটা ধরে নেওয়া হয়েছিল৷ প্রথম শ্রেণির টিকিটের মূল্য ছিল তখনকার দিনে ৪৪০০ ডলার৷ এখনকার দিনে যেটা প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকার সমান৷ (ডয়চে ভেলে)

টাইটানিক দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলে জাহাজের ক্যাপ্টেন সামনে আইসবার্গ এর সংকেত পান। আইসবার্গ হল সাগরের বুকে ভাসতে থাকা বিশাল বিশাল সব বরফখণ্ড। এর বড়ো অংশটাই থাকে পানির নিচে। তখন তিনি জাহাজের গতি সামান্য দক্ষিণ দিকে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার আকস্মিকভাবে বামে মোড় নেওয়ার অর্ডার দেন এবং জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। টাইটানিককে আর বাঁচানো সম্ভব হয় নি। ডানদিক আইসবার্গের সঙ্গে প্রচণ্ড ঘষা খেয়ে চলতে থাকে। ফলে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে চিড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি যেই স্থানে ডুবেছিল সেই স্থানের নাম হলো ‘গ্রেট ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ড’। টাইটানিক সর্বোচ্চ চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে ভেসে থাকতে পারতো। কিন্তু পানিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ৫টি কম্পার্টমেন্ট। এছাড়া পানি প্রতিরোধ এর জন্য ১২টি গেট ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এমন জায়গায় জাহাজটির ধাক্কা লাগে যে, সবগুলো গেটের পানি প্রতিরোধ বিকল হয়ে যায়। আস্তে আস্তে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে । রাত ২ টা থেকে ২ টা ২০ মিনিটের মধ্যে টাইটানিকের সম্পূর্ণ অংশ আটলান্টিকের বুকে তলিয়ে যায়।

টাইটানিকের সেই অতীতকে প্রথম খুঁজে বের করেছিলেন রবার্ট ব্যালাড নামে এক সমুদ্রবিদ। সময়টা ১৯৮৫৷ তার আগে যারা টাইটানিকের খোঁজ করেছিলেন, সকলেই গভীর পানিতে খুঁজেছিলেন৷ কিন্তু সেখানে তো নেই টাইটানিক৷ যেহেতু তার আকৃতিটা বিশাল, তাই সকলেরই ধারণা হয়েছিল, টাইটানিক নিশ্চয়ই অনেক গভীর জলেই ডুবেছে৷ কিন্তু আসল ঘটনা হয়েছিল অন্য৷ সমুদ্রের মাত্র ৩৮০০ মিটার নীচে ছিল টাইটানিক৷ সমুদ্রতলের নীলাভ আলোয় বিখ্যাত জাহাজটিকে দেখে এসে তার খবর জানান গোটা বিশ্বকে৷

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.