“সুরঞ্জিত সেনের বিদায়, ঝানু পার্লামেন্টেরিয়ানদের যুগের আপাতত অবসান”

শিহাব আহমেদ শাহীন

আপাদমস্তক পলিটিশিয়ান ও ঝানু পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত: তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত, সংসদ সদস্য হিসাবে তাঁর বয়স ও বাংলাদেশের পার্লামেন্টের বয়স ছিল সমান সমান।

ভাটি বাংলার গণমানুষের নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মূল পরিচয় হলো-তিনি আগাগোড়া একজন রাজনীতিবিদ ও ঝানু পার্লামেন্টেরিয়ান। ৭০’এর নির্বাচনে মাত্র ২৫ বছর বয়সে আওয়ামীলীগের জোয়ারের বিপরীতে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’র টিকেটে কুড়েঘর নিয়ে এমপিএ নির্বাচিত হন।

১৯৭২’র নভেম্বরে সংসদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় সেই সংসদে তিনি প্রস্তাবিত সংবিধানের উপর একাই প্রায় ৬০টির মত সংশোধনী এনে বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে নিজের স্থায়ী আসন করে নেন। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন কিন্তু সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি। ৭২-এর সংবিধানে তিনি সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির পক্ষে ছিলেন,আর তা হয়নি বলেই সম্ভবত তিনি চুড়ান্ত সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি।

১৯৭২ এ সেই সংসদে তিনি যখন বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন তখন বঙ্গবন্ধু স্নেহের ছায়ায় হেসে হেসে একবার বলেছিলেন, ” আগে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আমি যা বলতাম, সুরঞ্জিত এখন আমাকে সেই গুলি শুনায়”।

১৯৭৯’র পার্লামেন্টে স্পীকার মীর্জা গোলাম হাফিজ একদিন বিশেষ পরিস্থিতিতে, সেই সময়ের তরুন পার্লামেন্টেরিয়ান আ স ম ফিরোজকে সার্জেন্ট অব আর্মস ডেকে বের করে দেওয়ার জন্য উদ্যত হন, তখন তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন পার্লামেন্টকে মীর্জা হাফিজের পাঠশালা আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের সাথে ‘ওয়াক আউট’ করেন।

সুরঞ্জিত সেনের বিদায়ের পর থেকেই বলা চলে, বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ঝানু পার্লামেন্টেরিয়ানদের যুগের আপাতত অবসান হয়েছে।
শ্রদ্ধা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.