শাহরিয়ার নাফীসের অবসর: স্ত্রীর আবেগঘন পোস্ট

ইচ্ছে ছিল আরও কিছু দিন খেলে যাওয়ার; কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় শেষপর্যন্ত ফর্ম থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটকে বিদায় বলতে হচ্ছে দেশের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক ও শাহরিয়ার নাফীসকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে শনিবার দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেবেন এই দুজন।

এদিকে স্বামীর এমন বিদায়ী মুহূর্তে আবেগী হয়ে পড়েছেন শাহরিয়ার নাফীসের স্ত্রী ইশিতা নাফীস।

স্বামীর ক্রিকেটীয় জীবনের স্মৃতি সবার সঙ্গে শেয়ার করেছেন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে। জানিয়েছেন, জাতীয় দলে টিকে থাকতে কত সংগ্রাম করে গেছেন নাফীস।

ইশিতার ফেসবুকে শুক্রবার যে পোস্টটি দেওয়া হয়েছে নাফীসের অবসর নিয়ে সেটি পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-

‘অনেকবার আমি মানুষকে বলতে শুনেছি, ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা গোল্ড ডিগার (সম্পদ ও টাকা পয়সার লোভে যে নারী পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে) হয়। এটা সত্য, বিলাসবহুল গাড়ি, অনেক জুয়েলারি এবং কাপড়-চোপড়, নিয়মিত নামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে বিয়ে হলে এই সবকিছুই একসঙ্গে পাওয়া যায়, বিশেষ করে তিনি যদি হন জাতীয় দলের ক্রিকেটার।

কিন্তু সম্ভবত এই সব উপহারের প্যাকেজ ছাড়াও আরও কিছু জিনিসও পাওয়া যায়। ২০০৬ সালের কথা, যখন আমি শাহরিয়ার নাফীসকে বিয়ে করি। সে ছিল ওপেনিং ব্যাটসম্যান এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহঅধিনায়ক। বাংলাদেশ জাতীয় দলের উদীয়মান তারকা এবং বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় ছিল সে। আমাদের যাত্রাটা সুইজারল্যান্ডে ধারণ করা জশ রাজের ফিল্মের চেয়ে কম স্বপ্নীল ছিল না।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর ভেতরে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বিয়ের ৬-৭ মাসের মাথায় আমার স্বামী কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে ছিটকে পড়ে। বেতন ছিল না, ছিল না বিপিএল এবং ডিপিএলেও ওই সময় ভালো কিছু ছিল না। আমরা জানতাম না কি করে সব কিছু সামলাব। তার সঙ্গে ছিল আমার পড়াশোনা, তার পড়াশোনা এবং আমাদের জন্ম নেয়া প্রথম সন্তানের খরচ। তবে আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ দিতে হবে, যারা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। কোনো ব্যাপারেই তারা আমাদের ছেড়ে দেননি এবং ভেঙে পড়তে দেননি।

বিয়ের ১৪ বছর পার হওয়ার পর আমি এখন একজন আইনজীবী, একজন শিক্ষিকা, তার সন্তানদের মা এবং সেই মানুষটি যে কিনা তার উত্থান-পতনে সবসময় পাশে ছিল। আমি প্রতিটি দিন তার পাশে ছিলাম, যেদিন সে সেঞ্চুরি করে বাসায় ফিরতো কিংবা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে।

মাঝেমধ্যে মানুষ তার অর্জনের পুরো কৃতিত্ব আমাকে দিয়েছে, মাঝেমধ্যে তারা তার ব্যর্থতার জন্যও আমাকে দায়ী করেছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, কপালে যা আছে তা আমরা পাবই। আমি তাকে মনমরা দেখেছি, কিন্তু ভেঙে পড়তে নয়। ভালো দিন এবং ইতিবাচকতার আশা কখনও হারায়নি।

আমি সবসময়ই তাকে টিম বাংলাদেশ এবং তার সতীর্থদের জন্য হাততালি দিতে দেখেছি। এমনকি যখন সে দলের অংশ ছিল না তখনও। সে সত্যিকারের সততা, উদার মানসিকতা এবং সত্যবাদিতায় পরিপূর্ণ একজন মানুষ। এটাই শাহরিয়ার নাফীস। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে গর্বিত, তার যাত্রাপথের অংশীদার হতে পেরে গর্ববোধ করি। সে কতটা সফল হয়েছে সেটা ব্যাপার নয়।

এই যুগটা কাল (শনিবার) শেষ হয়ে যাচ্ছে। জীবনের নতুন শুরু অপেক্ষা করছে তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি তার পথচলা যেন মসৃণ এবং সহজ করে দেন। সেইসঙ্গে দোয়া করি, তার নাম যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.