রাজধানীর বুকে এক টুকরো সবুজ, হরসিতের নয়নাভিরাম ছাদবাগান

রাজধানী ঢাকার গোপীবাগ প্রথম লেনের ছয় তলাবিশিষ্ট ভবন ইম্পেরিয়াল কানিজ এর ছাদে উঠলে জবা, টগর, কাঠমালতি, নয়নতারা, তুলসি, বেলগাছ, দূর্বা ইত্যাদি বাহারি ফুল দেখে দুচোখ জুড়াতে বাধ্য। সবজির মধ্যে পুইশাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পিয়াজ, রসুন, মরিচ, শসা, পুদিনা পাতা, কচুশাক, ক‍্যাপসিকাম কী নেই! থোকায় থোকায় হরেক রকম ফলও ধরে রয়েছে এখানে সেখানে! বারমাসি আম, টসটসে আনার, দেশি জাতের পেয়ারা, লেবু কত কি!


ছাদবাগানে একইসাথে ফুল, ফল সবজি!

ছাদবাগানটি অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার বিশ্বাস হরসিত কুমারের। কথা বলতেই জানালেন, বাল্যকাল থেকেই তার গাছপালা এবং পশু-পাখির প্রতি আকর্ষণ। “১৯৮৭ সাল থেকে ঢাকায় বসবাস করছি। তখন থেকে ভাড়া বাসায় থাকাকালীন ব্যালকনিতে গাছপালা লাগিয়েছি। পরে নিজের একটা স্থায়ী নিবাস হওয়ার পর ছাদবাগান করি। বাগান করার মধ্য দিয়ে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ঢাকা শহরে যেখানে আজকাল একটু সবুজ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর সেখানে নিজের ছাদবাগানে প্রতিদিন আপনি পাচ্ছেন নির্মল বাতাস ও অক্সিজেন যা আপনার স্বাস্থ্যের কাজে আসবে৷ এ থেকে প্রতিদিন যে ফুল, ফল ও সবজি পাওয়া যায় তা দৈনন্দিন অনেক চাহিদাই মিটিয়ে দেয়”, হরসিত বলতে থাকেন।

সারাদিন চাকরি করে সময় বের করেন কিভাবে? “আমি সকাল-সন্ধ্যায় সময় করে নিয়েছি। কর্মদিবসগুলোতে সকালে প্রায় এক ঘন্টা আর সন্ধ্যায় আধা ঘন্টা নিয়ম করে ছাদবাগানে সময় দেই। তাছাড়া শুক্রবার-শনিবার তো বন্ধ আছেই। যখন ঢাকার বাইরে যাই তখন গৃহকর্মীকে বুঝিয়ে দায়িত্ব দিয়ে যাই।


হরসিতের সহধর্মিণী সব সময়ই উৎসাহ দিয়ে থাকেন এবং সহযোগিতাও করেন

হরসিত বাগানে কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না৷ সারের মধ্যে নিত্যদিনের তরকারির উচ্ছিষ্ট, বিভিন্ন রকমের খোসা ব‍্যবহার করেন। এছাড়া মাঝে মাঝে সরিষার খৈলও দিয়ে থাকেন।

নিজের হাতে করা বাগানে যখন ফুল ফুটতে দেখেন কিংবা ফল বা সবজি ফলতে দেখেন তখন কেমন লাগে এ প্রশ্ন করতেই জ্বলজ্বল করে উঠলো হরসিতের দুচোখ। বললেন, নিজের ছাদবাগানের ফুল, ফল ও সবজি দেখলে মনের মধ্যে যে আনন্দ ও শান্তি বোধ হয় তা আমি কিছুতেই লিখে বা বলে প্রকাশ করতে পারবো না। আমার দুই পুত্র। ওরা সুদূর ইউরোপ-আমেরিকায় থাকে। আমি আমার ছাদবাগানের গাছপালাকে সন্তান ভেবেই লালন পালন করি। আর সেই গাছে যখন ফুল বা ফল আসে তখন প্রতিটি দিন, সপ্তাহ ও মাসব্যাপী যত্ন করি যেনো ওদের কোন সমস্যা না হয়। ছোট্ট শিশু যেমন কথা বলতে পারে না কিন্তু আমরা সময় নিয়ে শিশুর যত্ন করে থাকি, গাছের যত্নও সেই রূপ করতে হয়। গাছতো কথা বলতে পারে না। তাই বুঝতে হবে তার কি প্রয়োজন, কি সমস্যা। তাকে সময় বুঝে পানি, সার ও মাটি দিতে হবে।


আসছে আমের মৌসুম। অন্যরা যখন বাজার থেকে কেনা আম ফরমালিন যুক্ত কিনা তা নিয়ে শংকায় থাকবেন, হরসিত তখন নিশ্চিন্ত।

আপনার বাগানে যেসব সবজি ও ফল রয়েছে তাতো বাইরে বাজারেও পাওয়া যায় এই কথার জবাবে হরসিত বলেন, বাজারে যে সবজি পাবেন তার চেয়ে নিজ বাগানের সবজির স্বাদটা একেবারে ভিন্ন। তাছাড়া মাঝে মাঝে আমার প্রতিবেশী অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকদের আমার বাগানের ফল, ফুল ও সবজি দিয়ে থাকি। এতে মনে শান্তি ও আনন্দ পাই। তাছাড়া আমরা সবাই যদি যার যার সাধ্যমত ছোট করে হলেও একটু বাগান করি তাহলে অনেকটাই সবুজ হয়ে উঠবে আমাদের ঢাকা শহর। এতে করে পরিবেশ দূষণ থেকে সবাই কিছুটা হলেও রক্ষা পাবো।

বাগান করতে অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকজন থেকে কোন বাধা বা অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়? “আমার বাগান করা নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে অকারণেই অনেকে ফুল-ফল নষ্ট করে ফেলে৷ তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।”

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.