যেভাবে সরানো হলো সুয়েজ খালের দানবাকৃতির জাহাজটিকে

প্রায় এক সপ্তাহ সময় সুয়েজ খালে আটকে থাকার পর দুই লাখ টন ওজনের কন্টেইনারবাহী জাহাজ এভার গিভেন-কে শেষ পর্যন্ত মুক্ত করা হয়েছে। জাহাজটি এখন তার গন্তব্যে রওনা হয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথে এভার গিভেন বেশ কয়েক দিন ধরে আড়াআড়িভাবে আটকে ছিল। এর ফলে অন্যান্য জাহাজকে ভিন্ন পথ ব্যবহার করতে হয়।

গত ২১ মার্চ মিশরের মরুভূমিতে যে ঝড় হয়েছিল সেই ঝড়ের প্রবল বাতাস আর খালের পানিতে জোয়ারের চাপে ৪০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজটি তার যাত্রাপথ থেকে সরে যায় এবং ঘুরে গিয়ে আড়াআড়িভাবে খালের পথ আটকে ফেলে।

প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০টি জাহাজ বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই জাহাজ পথটি ব্যবহার করে। কিন্তু এই ঘটনার পর সুয়েজ খালের দুই মুখে তৈরি হয় এক বিশাল যানজট।

রোববার পর্যন্ত পাওয়া এক হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৪৫০টি মালবাহী জাহাজ ১২০ মাইল লম্বা এই খালের দু’দিকে সাগরে এবং পার্শ্ববর্তী পোর্ট সাঈদে আটকা পড়েছিল।

অনেক জাহাজ ঘুর পথে চলে যেতে বাধ্য হয়। খালটি এখন চালু হলেও এই জট ছাড়তে সাড়ে তিন দিন সময় লেগে যাবে বলে মিশরের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।

সুয়েজ খালের তদারক করে মিশরের সুয়েজ ক্যানেল অথরিটি। এভার গিভেন-কে মুক্ত করতে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রথমে ব্যবহার করেন টাগ-বোট। জাহাজ থেকে মোটা মোটা রশি ফেলে টাগ-বোট দিয়ে টেনে জাহাজটিকে মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করা হয়।

একই সাথে জাহাজের যে অংশটি খালের চাড়ায় আটেক গিয়েছিল তা মুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় মাটি খোঁড়ার ডিগার। টাগ-বোটগুলো যখন দানবাকৃতির এই জাহাজটিকে ঠেলে সরাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল তখন আনা হয় মাটি খোঁড়ার ডিগার এবং ড্রেজার।

ডিগার দিয়ে জাহাজের যে অংশটি তীরে ঠেকে গিয়েছিল সেই জায়গার মাটি কেটে ফেলা হয়। আর ড্রেজার দিয়ে জাহাজের তলা এবং আশেপাশের কাদা ও বালি সরিয়ে ফেলা হয়।

ম্যারিটাইম বিশেষজ্ঞ স্যাল মার্কোগ্লিয়ানো বলছেন, এই ধরনের ড্রেজার সুয়েজ খালে হরদম ব্যবহার করা হয়। এদের কাজ খালের নাব্যতা বজায় রাখা। ড্রেজারগুলো থেকে লম্বা পাইপগুলো জলের তলায় গিয়ে মূলত কাদা আর বালি শুষে তুলে বাইরে ফেলে দেয়।

ড্রেজারগুলো দিয়ে জাহাজের তলা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টন বালি ও কাদা সরানো হয়। মিশরের অর্থনীতি সুয়েজ খালের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। করোনা মহামারির আগে মিশরের জিডিপির প্রায় ২% আয় হতো সুয়েজ খাল থেকে পাওয়া মাশুল থেকে।

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খাল বন্ধ থাকায় তাদের প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার লোকসান হয়েছে।

অন্যদিকে, লয়েডস লিস্টে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, শত শত মাল ভর্তি জাহাজ আটকে থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলারের ব্যবসা বন্ধ ছিল।

টাগ-বোট আর ড্রেজার ব্যবহার করেই শেষ পর্যন্ত এভার গিভেনকে মুক্ত করা হয়। এটা ব্যর্থ হলে তৃতীয় একটি উপায়ও বিবেচনার মধ্যে ছিল।

তা হলো সব মালামাল এবং জ্বালানি তেল সরিয়ে ফেলে জাহাজটিকে হালকা করে ফেলা। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আটকে পড়া জাহাজটিকে সরিয়ে নেয়ার পর খাল দিয়ে মোট ১১৩টি জাহাজ চলাচল করেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.