প্রাথমিকে ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আগামী মাসে!

করোনা মহামারির মধ্যেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসছে। প্রাথমিকের ইতিহাসে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। সৃষ্ট ও শূন্য পদ মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে (ডিপিই) নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে অধিদপ্তর। তবে নতুন নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী এবারই প্রথমবারের মতো স্নাতক পাস ছাড়া আবেদন করতে পারবেন না নারী প্রার্থীরা। পুরুষ প্রার্থীদের আবেদনের যোগ্যতা আগের মতোই স্নাতক পাস থাকছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রাক-প্রাথমিক স্তরের জন্য ২৬ হাজার ১৬৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ সৃজন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এই পদগুলো এবং বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য থাকা সহকারী শিক্ষকের পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আমরা চেয়েছিলাম চলতি মাসেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে। কিন্তু করোনার কথাও চিন্তা করছি। তবে এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মামলার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর সর্বশেষ ২০১৮ সালে ১৮ হাজার ১৪৭ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর প্রতিটি উপজেলা থেকে শূন্য পদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই শূন্য পদের তালিকা এসে অধিদপ্তরে জমা হচ্ছে। শূন্য পদের সংখ্যা ১৫ হাজার হতে পারে। এ ছাড়া নতুন সৃজন করা প্রায় ২৬ হাজার পদ রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে এবার প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে চলতি মাসে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনলাইনে আবেদন করলেও যদি ২৫ লাখ প্রার্থী আবেদন করে তাদের নানা কারণে বাইরে বের হতে হবে। তাই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে। আমরা চলতি মাসেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’

মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘২৬ হাজার ১৬৩ পদ সৃজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাত থেকে আট হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া শুরু হবে। এতে আরো সাত-আট হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হবে। ফলে সব মিলিয়ে ৪০ হাজারের কাছাকাছি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে।’
জানা যায়, ২০১৮ সালের শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষা দেন প্রায় ৫৫ হাজার প্রার্থী। তাঁদের মধ্য থেকে ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ না হওয়া ৩৭ হাজার প্রার্থী প্যানেলের মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ‘করোনাকালে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দুরূহ। আমরা যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, তাই আগে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হোক।’

জানা গেছে, সম্প্রতি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের বদলে দুই বছর করার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ প্রাথমিকে আরেকটি শ্রেণি বাড়ছে। আগামী বছর থেকেই এর পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে সব বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক চালু করা হবে। তখন ৬৫ হাজার ৬২০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরো একজন করে সহকারী শিক্ষক এবং একজন করে আয়া নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকেই এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে ৬৫ হাজার ৬২০ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হবে। ফলে প্রাথমিকে আগামী দিনেও আরো বড় বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.