কৃষকদের সুখবর দিলেন সিকৃবির গবেষকরা

কৃষকের ফসল উৎপাদনের সিংহ ভাগ ব্যয় হয় জমিতে সেচ দিতে। তা নিয়ে বলা যায় অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যেই থাকতে হয় কৃষকদের। সঠিক সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে না পারলে ফসলের উৎপাদনে হেরফের ঘটে। তবে এবার কৃষকের জন্য সুখবর দিচ্ছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) একদল গবেষক।

গবেষকরা জানান, তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি প্রচলিত জ্বালানি নির্ভর সেচ-যন্ত্রের চেয়ে শতকরা ৬০ ভাগ মূল্য সাশ্রয়ী। প্রস্তাবিত সম্পূর্ণ সেচ মডিউলটির বর্তমান বাজারমূল্য সর্বসাকুল্যে ২৮ হাজার টাকা। এদিকে বর্তমানে যে কোনো প্রচলিত সৌর পাম্পের দাম অবস্থাভেদে প্রায় ৯ লাখ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ‘এমএস’-এর শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান তার গবেষণায় তুলে ধরেন, কিভাবে সময়োপযোগী ও সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষক পর্যায়ে সৌর বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে বর্তমান প্রচলিত ধারার সেচের চেয়ে ৬০ শতাংশ কম খরচে জমিতে সেচ প্রয়োগ করা যায়। আর তাকে এ ব্যাপারে প্রাথমিক নির্দেশনা, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক এবং একই বিভাগের অধ্যাপক ড. পীযুষ কান্তি সরকার।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বিঘা জমিতে সেচ প্রয়োগে মাত্র ৪৩৩৫ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ প্রচলিত জ্বালানি নির্ভর পাম্পের মাধ্যমে এই সেচ কাজে খরচ হতো প্রায় ১০,৬০০ টাকা। সৌরশক্তি অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব, তা সবারই জানা। যদিও তা মাঠ পর্যাযে জনপ্রিয় হচ্ছে না, শুধু তার উচ্চ মূল্যের কারণে। এই প্রাথমিক সমস্যাটিকে সামনে রেখেই গবেষণা কাজটি শুরু করেন কৃষি প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান।

বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রসারিত করতে পারে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট ডিজেল চাহিদার শতকরা ৫ ভাগ কমানো সম্ভব এবং আগামী ২০ বছরে প্রায় ১.০৮৬ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে, যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করবে।

এ বিষয়ে গবেষণা কাজের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. পীযুষ কান্তি সরকারের বলেন, ‘তরুণ গবেষক মোস্তাফিজুর রহমানের গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি সুফল ভোগ করবেন এবং উপকৃত হবেন বলে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। আমার প্রত্যাশা, সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এই সেচ মডিউলটি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’

সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সানজিদা পারভীন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি যুগোপযোগী প্রযুক্তি। আমাদের বিভাগের একজন গবেষক দ্বারা প্রযুক্তিটি উদ্ভাবিত হওয়ায় আমি গর্ববোধ করছি। আমার প্রত্যাশা, দেশের কৃষকরা এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উপকৃত হবেন।’

উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি চাই সরকারের সহায়তায় এটি প্রান্তিক কৃষকদের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা পেলে আমি তা করতে পারবো বলে আশাবাদী।’

গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান একজন তরুণ কৃষি প্রকৌশলী এবং আগামীতে তিনি গবেষণা কাজে নিজেকে নিবেদিত রাখতে চান। তার পিতা মো. মাকসুদুর রহমান ভুঁইয়া বাংলাদেশ ডাক বিভাগে কর্মরত আছেন। তার আদি নিবাস নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চুলা গ্রামে

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.